নক্সী- কাঁথার মাঠ-১১
আগে আগে ছুটল রূপা-বৌঁ বৌঁ বৌঁ সড়কি ঘোরে,
কাল সাপের ফণার মত বাবরী মাথায় চুল যে ওড়ে
চলল পাছে হাজার লেঠেল “আলী আলী” শব্দ করি,
পায়ের ঘায়ে মাঠের ধুলো আকাশ বুঝিও ফেলবে ভরি!
চলল তারা মাঠ ফেরিয়ে চল তারা বিল ডিঙ্গিয়ে
কখন ছুটে কখন হেটে বুকে বুকে তাল ঠুকিয়ে।
চল যেমন ঝড়ের দাপে ঘোলাট মেঘের দল ছুটে যায়,
বাও কুড়ানীর মতন তারা উড়িয়ে ধুলী পথ ভরি হায়!
দুপুর বেলা এল রূপাই গাজনা চরের মাঠের পরে,
সঙ্গে এল হাজার লেঠেল সড়কি লাঠি হস্তে ধরে!
লম্ফে রূপা শূন্য উঠি পড়ল কূঁদে মাটির পরে,
থাকল খানিক মাঠের মাটি দন্ত দিয়ে কামড়ে ধরে।
মাটির সাথে মুখ লাগায়ে,মাটির সাথে বুক লাগায়ে,
“আলী! আলী!! ” শব্দ করি মাটি বুঝি দ্যায় ফাটায়ে।
হাজার লেঠেল হুঙ্কারি কয়”আলী আলী হজরত আলী”।
সুর শুনে তার বন গেয়োদের কর্ণে বুঝি লাগল তালি!
তারাও সবে আসল জুটে দলে দলে ভীম পালোয়ান,
“আলী আলী” শব্দে যেন পড়ল ভেঙে সকল গাঁখান!
সামনে চেয়ে দেখল রূপা সার বেঁধে সব আসছে তারা,
ওপার মাঠের কোল ঘেষে কে বাঁকা তীরে দিচ্ছে নাড়া।
রূপার দলে এগোয় যখন,তারা তখন পিছিয়ে চলে,
তারা আবার এগিয়ে এলে এরাও হটে নানা কলে।
এমনি করে সাত আটবার এগোন পিছন হল যখন,
রূপা বলে ,”এমন করে “কাইজা” করা হয়না কখন।”
তাল ঠুকিয়া ছুটল রূপাই, ছুটল পাছে হাজার লাঠি,
“আলী আলী- হজরত আলী” কণ্ঠ তাদের যায় যে ফাটি।
তাল ঠুকুয়া পড়ল তারা বন-গেঁয়োদের দলের মাঝে,
লাঠীর আগায় লাগল লাঠি, লাঠির আগায় সড়কি বাজে।
“মার মার মার ” হাঁকল রূপা,- “মার মার মার ” ঘুরায় লাঠি,
ঘুরায় যেন তারি সাথে পায়ের তলে মাঠের মাটি।
আজ যেন সে মৃত্যু -জনম ইহার অনেক উপরে উঠে ,
জীবনের এক সত্য মহান লাঠির আগায় নিচ্ছে লুটে!
মরণ যখন মুখমুখি নাচছে তাহার নাচের তালে,
মহাকালের বাজছে বিষাণ আজকে ধরার প্রলয়কালে।
নাচে রূপা-নাচে রূপা-লোহুর গাঙে সিনান করি,
মরণরে সে ফেলছে ছুরে রক্তমাখা হস্তে ধরি।
নাচে রূপা-নাচে রূপা -মুখে তাহ্র অট্টহাসি,
বক্ষে তাহার রক্ত নাচে, চক্ষে নাচে অগ্নিরাশি।
-হাড়ে হাড়ে নাচন তাহার ,রোমে রোমে লাগছে নাচন
কি যেন সে দেখেছে আজ , রুধতে নারে তারি মাতন।
বন-গেঁয়োরা পালিয়ে গেলো,রূপার লোকো ফিরল বহু,
রূপা তবু নাচছে, গায়ে তাজা-খুনের হাসছে লোহু।