এমনও দিনে তারে বলা যায় …।।

বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ঘুমানি, কখনো ঝিরঝির, কখনো ঝরঝর। কখনো মাতাল বৃষ্টি, কখনো তালে ঠিক। হাজার রকমে ঝরছে পানি এই ঘোর কলির বর্ষায়। ভাবছি। অবাক হচ্ছি। সন্দেহ করছি, আসলেই যেমন বলা হচ্ছে সেভাবেই হচ্ছে, নাকি একটু আলাদাভাবে ঝরছে জল। সারাদিনই মেঘ বৃষ্টি লুকোচুরি ছিল। কিন্তু খুব বেশী বৃষ্টি হয়নি। এখনো খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছে তা না। কিন্তু খেয়াল করলাম, বাহিরে রিম ঝিম বৃষ্টি হচ্ছে। ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালাম। কয়েক ফোটা পানিও এসে গায়ে পড়লো, চরম এক অনুভুতি তৈরী হলো মনের মধ্যে। মাথাটা আচমকা হালকা লাগছে। আজকের বৃষ্টিটা কেমন যেন মনে হচ্ছে একটা যবনিকা ছিঁড়ে দিয়ে গেছে, কোথাও একটা তাল কেটে ছিল, সেটাকে জুড়ে দিয়ে গেছে কিন্তু বেশ লাগছে …..।

বৃষ্টি হচ্ছে, প্রচণ্ড বৃষ্টি। মনের অন্দরে, বাইরে ।। অদ্ভুত এক বিষণ্ণতার মাঝে হারিয়ে ফেলছি নিজেকে, খুঁজে পাচ্ছি না কিছুতেই। মিনিট দুয়েক ব্যালকনিতে থেকে রুমে ফিরে এসে আবার শুয়ে পরলাম। চিন্তা করে যাচ্ছি দিনটাকে কি করে কাটানো যায় ? আধো আধো ঘুম চোখে বৃষ্টির দিনের ১টা গান শুনলে মন্দ হয়না। ফোনটা হাতে নিয়ে youtube থেকে ১টা গান লিখে শুনতে শুরু করলাম……

পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে ওঠে !!

চেনা সোনার কোন বাহিরে, যেখানে পথ নাই নাইরে ……।।

পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে ওঠে …।।

গানটা শুনার পর থেকে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। কোথায় যেন হারিয়ে ফেললাম নিজেকে। আজকাল আমার আমিকেই চিনতে বড় কষ্ট হয়। মনের ক্যানভাসের সব রঙ যেন সেই ভালোবাসার বৃষ্টি ধুয়ে ফেলেছে। মানুষের অতীতের সৃতিগুলো কেন পিছু ছাড়তে চায়না ? সব কিছুতেই কেন আমার পিছু নিয়ে বসে আছো ? চলে যাওনা অনেক দূরে এই আমাকে একা ফেলে, প্লিজ …।।

বিছানায় শুয়ে অনেক কিছু মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে। আজ জব আছে, বছরের শুরুতেই ১টা সিক কল দিয়ে দিসি কিন্তু আজও যে সেই একই সিক কল দেয়ার চিন্তায় আছি !!! আজকের এই মেঘলাভরা দিনটাতে শুধু তোমাকেই মনে রেখে কাটাতে চাই। অন্য কিছুই আজ তোমার আর আমার মাঝে বাঁধা হয়ে থাকতে পারবেনা। দীর্ঘ ১১ মাসের লম্বা ১টা গ্যাপ থেকে গেলো তোমার আর আমার মাঝে। জানি কখনও সেটা পরিপূর্ণ হবেনা আর সেটা পরিপূর্ণ হবার সম্ভবনাও নাই।

দুপর পর্যন্ত শুয়ে থাকতে থাকতে শরীর বেথা হয়ে গেসে। একটু ঠাণ্ডা অনুভব করায় জ্যাকেট পরে ড্রয়ার থেকে ১টা সিগারেট নিয়ে চলে গেলাম আবার সেই ব্যালকনিতে। সিগারেটটা হাতে রেখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখলাম আশেপাশের নীরব নিস্তব্দ পরিবেশ। জীবনের তাগিদে কিছু মানুষ ছুটে চলেছে যার যার গন্তব্যে। আর আমার গন্তব্য থাকা সত্তেও পরে আছি নিরলস নিস্তব্দ হয়ে। নাহ এইবার সিগারেটটা জ্বালাতেই হবে। আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে নিজেকে কষ্ট দিতে, তাইতো প্রায় ৩-৪ মাস পর সিগারেট হাতে নিলাম। সিগারেটের প্রতিটা টান যেমন ধোঁয়া হয়ে বাতাসে মিলিয়ে যায় কষ্টের জোয়ার বেধ করে ঠিক তেমনি আমার মনে গেঁথে যায় তোমার দেয়া প্রতিটা চিৎকার। মনে পরে এই সিগারেট খাওয়া নিয়ে কতটা তুলকালাম বাঁধাতে তুমি ? আমাকে কষ্ট দেবার জন্য আমার সামনে তুমি সিগারেট নিয়ে বসে থাকতে। এখনও ভুলতে পারিনি, আমাকে এই সিগারেট ছাড়ানোর জন্য রাগে তুমি আমার হাত থেকে জ্বলন্ত সিগারেটটা নিয়ে তোমার বাম হাতের শেষ আঙ্গুলটায় চেপে ধরে রেখেছিলে। কষ্টে তোমার চোখ দিয়ে সাথে সাথে পানি বের হয়ে আসলো আর এর সাথে আমারও। গাল ফুলিয়ে আমাকে ধমক দিয়ে বললে আমি কান্না করি কেন ? আরে বোকা, জ্বলন্ত সিগারেটের ছেঁকা তো তুমি দিয়েছ তোমার শরীরকে কিন্তু বেথাটা যে পেয়েছি আমি !!! সেই ত্থেকে তোমার মাথায় হাত রেখে প্রমিজ করেছিলাম আর কোনোদিন সিগারেট খাবো না। তুমি চলে যাবার পর থেকে শুধু নিজেকে কষ্ট দেবার জন্য মাঝে মাঝে সিগারেট খাই। কষ্টতো তোমার হয়না, আসল কষ্টটা তো পাই আমি।

তোমাকে বলেছিলাম না, বৃষ্টির মাঝে আমার সব চেয়ে ভালো লাগে নদীর পাড় ধরে ছাতা নিয়ে খালি পায়ে হাঁটতে ? আজ এই বৃষ্টির দিনে কেনই বা বাদ যাবে এই ইচ্ছাটা ? যেই ভাবা সেই কাজ। চলে আসলাম লন্ডন এর ১ মাত্র বিখ্যাত থেমস নদীর পাড়ে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস আর এর সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতো হচ্ছেই। না ছাতা আনিনি, ভিজতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তাই। কখনও তোমার সাথে আসা হয়নি এই থেমস নদীর পাড়ে, শুধু বলতে যখন তোমার খুব মন খারাপ হবে এই থেমস নদীর পাড়ে এসে কোন ১টা বেঞ্চে একা বসে থাকবে। জানো, তোমার কল্পনার সেই বেঞ্চটা, সেই জায়গাটা, সেই প্রিয় মুহূর্তটা আজ আমি অনুভব করতে পারছি। ঠাণ্ডা বাতাসের কাঁপুনিতে শরীরের প্রতিটা লোম দাড়িয়ে জানান দিচ্ছে তোমাকে ছাড়া আমার একাকীত্বটা। আর কত কষ্ট দিতে চাও আমাকে … ???

অসহায় দাঁড়কাকের মতো দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফিরলাম। ফ্রেশ হয়ে গরম ১ কাপ চা নিয়ে বসে পরলাম তোমার ছবির এ্যালবামটা নিয়ে। দেখতে থাকলাম একের পর এক সৃতিচারণ ছবিগুলো। মনের কান্নার চেপে থাকা কষ্টগুলো বের হয়ে আসতে চাচ্ছে তোমার ছবিগুলো বুকে জরিয়ে ধরে কিন্তু পারছিনা কেন জানো, যদি আমার মনের কান্নার কথাগুলো শুনে তুমি কষ্ট পাও … !!! টিপ টিপ বৃষ্টি এখনও পরছে। জানালা দিয়ে দুচোখ ভরে দেখে চলেছি ভেজা প্রকৃতির অদ্ভুত সোন্দর্যকে।

কোন এক বৃষ্টির দিনে

তুমি আমি হাত ধরে

হারিয়েছিলাম দূরে

জলের নৃত্য তালে

মিশে গিয়েছিল পদধ্বনি

মনে কি পরে তোমার?

জলের অসীম স্রোতধারায়

দুজনের আবেগ মিলে মিশে

হয়েছিল একাকার

অসীম প্রকৃতির লীলাখেলার

দর্শক হয়ে ভিজেছিলাম

মনে কি পরে তোমার?

তুমি ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিলে

আমি তোমায় উষ্ণ আবেগে জড়িয়েছিলাম

প্রকৃতি নিরব সাক্ষী হয়ে গিয়েছিল সেদিন

মনে কি পরে তোমার?

সত্যিই কি কিছুই মনে পরেনা আজ তোমার … ???

আচ্ছা, তুমি কি এখনও বৃষ্টি ভালোবাসো ? খুব জানতে ইচ্ছে করে আমাকে ছাড়া তুমি স্বেচ্ছায় বৃষ্টিতে ভিজতে পারছতো ? জানো, আজও আমি বৃষ্টিতে ভিজি। তবে আগের ভেজার মাঝে অনেক ভালোবাসা ছিল, অনেক স্বপ্ন ছিল। আর আজকে ভিজি বৃষ্টির জলের সাথে নিজের মনের ব্যথা গুলোকে মিশিয়ে দিয়ে মেঘেদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করার জন্য।

আকাশের একপ্রান্তে একটুকরো রংধনু ফুটে উঠেছে । যেনো আমার মনের বিষণ্ণতা দেখেই প্রকৃতি সাতরং এর মাধুরী মিশিয়ে হেসে উঠেছে। কখনও বৃষ্টি হাসছে, বৃষ্টি কাঁদছে, আমাকে কাঁদাচ্ছে, তোমাকে হাসাচ্ছে। হা, আজ প্রকৃতির সাথে সাথে আমার মনও কাঁদছে। তোমাকে না পাবার হাহাকারে কাঁদছে। তোমাকে না পেয়ে একাকীত্ব হয়ে মন কাঁদছে। আর এর সাথে আমিও কাঁদছি। আমার চোখে আজ একটু জল মনে হলো। এ কি অশ্রু না বৃষ্টি, জানি না। শুধু এতোটুকুই জানি, অবিশ্রান্ত বর্ষণের এ যেন আজ এক মহোৎসব …..।।